শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড়ে সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে খাবার ও নিত্যপণ্যের সংকট

ঘূর্ণিঝড়ে সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে খাবার ও নিত্যপণ্যের সংকট

ঘূর্ণিঝড়ে সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে খাবার ও নিত্যপণ্যের সংকট

শাকের বিন ফয়েজ, কক্সবাজার : চার দিনে ধরে নিত্যপণ্য সরবরাহ না থাকায় এবং জেলেরা মাছ ধরতে না পারায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল থেকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।সরেজমিনে গেলে কথা হয় দ্বীপের পূর্ব পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দ আহমদের সাথে। ৫৮ বছর বয়সেও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। ঘূর্নিঝড় মোখার আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে তাঁর কুড়েঘর। তিনি বলেন, ‘চারদিন ধরে মাছ ধরতে যেতে না পারায় পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে উপোস থাকার উপক্রম হয়েছে। চালডাল কিছুই ঘরে নেই। তবুও ঘর ও ঘেরাবেড়া মেরামত করার চেষ্টা করছি।’শুধু ছৈয়দ হোসেন নন, ঘুর্ণিঝড় মোকার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ দ্বীপের বারোশ’র বেশি বাড়িঘর। ৮ বর্গকিলোমিটারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে যতদূর চোখ যায় শুধুই ধ্বংসস্তুপ।

বিধ্বস্ত বাড়িঘর, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপের রক্ষা দেয়াল কেয়াবন। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে তারা এখন এখন বাঁশ ও ত্রিপল সংগ্রহ করে মেরামত করার চেষ্টা করছেন। আর আশায় আছেন সরকারি সহায়তার।আরও অনেকের মত মোখার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পূর্ব পাড়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্বাস আলীর ঘর। উঠানে উপড়ে পড়েছে বিশাল কাঠ বাদাম গাছ। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িঘর মেরামতের কাজ শুরু করেছেন তিনি।আব্বাস আলী বলেন, ‘ঘর হারালাম। আমার একটি মুদির দোকান ছিল, সেটিও ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কোন জিনিসপত্র বাঁচেনি। সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে রান্না করার মত অবস্থা নেই। টেকনাফ থেকে গত চার দিন ধরে মালামাল আসছে না। তাই জিনিসপত্রের দামও বাড়তে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন নিত্যপণ্য না এলে সেন্টমার্টিনজুড়ে খাবার সংকট তীব্র হবে।’৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াস খোকন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দার জন্য সাগরপথে খাবার ও নিতপণ্যের যোগান আসে টেকনাফ থেকে। কিন্তু চারদিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্য ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। আর মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।’উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের সময় বানৌজা সমুদ্রজয় এর অধিনায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আজকে আমরা খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি এবং চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছি। আমরা প্রচুর ওষুধপত্র নিয়ে এসেছি। সমুদ্রের পরিস্থিতি যদি খারাপ থাকে আরও ২/৩ দিন আমরা ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখবো। দুর্যোগের ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে আমরা প্রথম থেকেই আমাদের সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম।’জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘যার নগদ অর্থ সহায়তা প্রয়োজন তাকে নগদ অর্থ সহায়তা, যার গৃহ নির্মাণের জন্য ঢেউটিন প্রয়োজন তাকে আমরা ঢেউটিন দেবো। আর যার ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন তাকে ত্রাণ সামগ্রী দেবো। আমি সেন্টমার্টিনবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই ঘূর্ণিঝড়ে একজন মানুষও সরকারের ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে না।’

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |